এমন একটি লাইব্রেরী, যেখানে থাকে না কোন লাইব্রেরিয়ান। যতদিন খুশি বই নিয়ে এসে নিজের কাছে রেখে দিতে পারেন

Street Library
শেয়ার করুন

Topic:| Street Library in Kolkata

বই পড়তে কে’না ভালোবাসে। তা যদি গল্পের বই হয়, যেমন-ফেলুদা, ব্যোমকেশ, শার্লক অথবা কোন ভুতের গল্প, তাহলে তো আর কথাই নেই। একটা বই নিয়ে, কখন সময় কেটে যাবে আপনি বুঝতেই পারবেন না।
আপনি নিশ্চয়ই কোন না কোন দিন, বই পড়ার জন্য লাইব্রেরীতে গেছেন। অথবা লাইব্রেরী থেকে কোন বই নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে পড়েছেন। আবার লাইব্রেরীতে বইটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিয়েছেন। আচ্ছা, এমনটা হলে কেমন হতো, যদি বই জমা দেওয়ার, অথবা বই বাড়িতে নিয়ে এসে রাখার নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা না থাকে। মানে আমি বলতে চাইছি, আপনি বই নিয়ে এলেন, যতদিন ইচ্ছে কাছে রাখলেন, পড়লেন, জমা দিতে ইচ্ছে হলে, জমা দিলেন। না ইচ্ছে হলে দিলেন না। এমনটা হলে কেমন হতো ? কেমন হতো, কোন লাইব্রেরীতে যদি সারি সারি বই সাজানো থাকতো, কিন্তু কোন লাইব্রেরিয়ান না থাকতো ? আপনার যে বইটি ইচ্ছে হয়, নিয়ে পড়লেন । কোনটা ইচ্ছে হলে বাড়িতেও নিয়ে এলেন, কাউকে কিছু বলার দরকার নেই ।

কি, আজগুবি লাগছে তো ? না, আজগুবি নয়। চলুন, আজ আমি আপনাদের সঙ্গে এমন একটি লাইব্রেরির পরিচয় করিয়ে দেব, যেখানে কোন লাইব্রেরিয়ান থাকে না। লাইব্রেরি 24 ঘন্টাই খোলা।  কোন বই বাড়ি নিয়ে এলে, জমা দেওয়ার তাড়া থাকবে না। যতদিন খুশি বই আপনি কাছেই রাখতে পারেন। খুশি হলে জমা দিতে পারেন, নাও পারেন। অথবা, একটি বইয়ের বদলে অন্য বই জমা দিয়ে আসতে পারেন। হ্যাঁ এমন লাইব্রেরী আছে খাস কলকাতাতেই। এই লাইব্রেরীর পোশাকি নাম স্ট্রীট লাইব্রেরী বা পথ গ্রন্থাগার।

স্ট্রীট লাইব্রেরী বা পথ গ্রন্থাগার কি?

Topic:| What is Street Library in Bengali

স্ট্রীট লাইব্রেরী বা পথ গ্রন্থাগার হলো এমন একটি স্থান, যেখানে সব সময়ের জন্য কোন লাইব্রেরিয়ান বসে থাকেনা। বই নেওয়ার জন্য বা ফেরত দেওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া নেই। আপনার যে বইটা খুশি, যতদিন খুশি, আপনি নিয়ে যেতে পারেন, আবার পড়া হলে ফেরত দিতে পারেন।

কলকাতার একটি স্ট্রিট লাইব্রেরি

কলকাতার বিভিন্ন রাস্তার অলিতে-গলিতে, কিংবা বিভিন্ন পার্কে, আপনি এই লাইব্রেরী দেখতে পাবেন। যেখানে কোন লাইব্রেরিয়ান নেই। নেই কোনো নিয়মের বাঁধাধরা।

দেশপ্রিয় পার্কের স্ট্রিট লাইব্রেরি  

এমন লাইব্রেরী বিদেশের রাস্তায় প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশের নাগপুর, চেন্নাই ও অন্যান্য শহরে এমন স্ট্রীট লাইব্রেরী রয়েছে। কলকাতায় iLead এবং Bichinta নামের দুটি এনজিও হাত মিলিয়ে তৈরি করে ফেলেছে প্রায় 200 টির বেশি স্ট্রীট লাইব্রেরী বা ওপেন লাইব্রেরি। সাধারণ মানুষ এখান থেকে বই নিয়ে পড়ছেই। তা ছাড়াও গরিব বাচ্চারা, পথশিশুরা নিয়মিত স্ট্রীট লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে পড়াশোনা করে।


আরো পড়ুন:

ভারতেই রয়েছে পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান। রয়েছে ভাসমান ঘরবাড়িও।

সত্যজিৎ রায়ের অপ্রকাশিত লেখা ও নিজের হাতে আঁকা ছবি নিয়ে প্রকাশিত হল বই 3 rays


স্ট্রিট লাইব্রেরিতে কিছু ক্ষুদে 


আপনি চাইলে এমন একটি লাইব্রেরী আপনার এলাকাতে খুলে ফেলতে পারেন। আপনার ইচ্ছে হলে, আপনি হবেন সেই লাইব্রেরীর লাইব্রেরিয়ান। অথবা, আপনার পুরনো বই দান করেও, এই লাইব্রেরী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে, এবং সবাইকে বই পড়ানোর লক্ষ্যে, আপনার অপ্রয়োজনীয় বইগুলো দান করতে পারেন iLead নামক সংস্থাটিকে। পুরনো বই দান করার জন্য, আপনাকে ফোন করতে হবে 90733370793 নম্বরে এবং সংস্থাটি আপনার কাছ থেকে বইগুলো সংগ্রহ করে নেবে। আপনি সংস্থা থেকে একটি সার্টিফিকেট পাবেন, যাতে আপনার বই দান করার সমস্ত তথ্যের উল্লেখ থাকবে। এছাড়াও আপনি iLead Street Library এর ওয়েবসাইট সার্চ করে দেখতে পারবেন, আপনার বই কোথায়, কোন লাইব্রেরীতে আছে।

কলকাতার স্ট্রিট লাইব্রেরী আন্দোলনের রূপকার, শ্রী প্রদীপ চোপড়ার কথায়-
” ভারত ধন্য হয়েছে, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক তরুণ প্রজন্মকে পেয়ে। আমরা তাদের ক্ষমতাশালী করে তুলতে পারি, তাদের স্ব-শিক্ষার সুযোগ দিয়ে। তাদের উৎসাহিত করতে হবে বই পড়ার জন্য। পড়ার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বিকশিত হবে এবং তারা আরো বেশি অনুপ্রেরণা পাবে। এখন সমস্যা হল, বই এখনো খুবই দামি। এবং অনেক মানুষ আছেন যাদের বই কেনার ক্ষমতা নেই, যেমন- সমাজের অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল শ্রেণীর মানুষদের বাচ্চারা । কোন রিটায়ার্ড লোক, যার অনেক সময় আছে, বা অন্য যে কেউ এখানে যুক্ত হতে পারেন। এবং এই তরুণ প্রজন্মকে স্ব-শিক্ষার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেন।”

স্ট্রিট লাইব্রেরিতে উৎসাহী ক্ষুদে 

প্রদীপ বাবু, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এবং ভারতের চেন্নাই এবং নাগপুরে এই ধরনের স্ট্রীট লাইব্রেরী দেখে, অনুপ্রাণিত হয়ে, নিজেও কলকাতাতে খুলে ফেলেছেন 200 টিরও বেশি স্ট্রীট লাইব্রেরী। তাঁর কথায়, ” কলকাতা বইপ্রেমী শহর আমাদের প্রত্যেকেরই বাড়িতে অনেক বই আছে। যার মধ্যে বেশির ভাগকেই আমাদের বা আমাদের বাচ্চাদের পড়া হয়ে গেছে। অনেক বই আছে, যা আমাদের অপ্রয়োজনীয়। এই বইগুলো লাইব্রেরীতে রাখলে, অনেকে তা কাজে লাগবে। তাদের কাজে লাগবে, যাদের বইগুলো দরকার ।”


এই লাইব্রেরী, শুধুমাত্র বই দান করার জন্য, বা বই নেওয়ার মধ্যেই থেমে নেই। মাঝে মাঝেই এই স্ট্রীট লাইব্রেরি কে কেন্দ্র করে, নানা রকম ছোট ছোট সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্থাটি। যেমন- গল্প পাঠের আসর, বই পড়ার আসর, নাচ-গান-আবৃত্তি ইত্যাদি। আপনিও যুক্ত হতে পারেন, এই মহৎ উদ্যোগে।

নিচে রইল স্ট্রিট লাইব্রেরি (ilead Street Library) এর ফটো গ্যালারি। সমস্ত ছবি ilead Street Library এর facebook পেজ থেকে সংগৃহীত।

আরো পড়ুন:

মুম্বাইতে পাওয়া গেল নতুন প্রজাতির জাম্পিং স্পাইডার। নাম রাখা হলো 26/11 এর মুম্বাই হামলায় শহীদ পুলিশ অফিসারের নামে।

Advertisement
Advertisement

2 thoughts on “এমন একটি লাইব্রেরী, যেখানে থাকে না কোন লাইব্রেরিয়ান। যতদিন খুশি বই নিয়ে এসে নিজের কাছে রেখে দিতে পারেন”

  1. Pingback: পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান ন্যাশনাল পার্ক 'কেইবুল লামজো ন্যাশনাল পার্ক' (Keibul Lamjao National Park) - Benami chithi - বেনাম

  2. Pingback: বিশ্ব ইমোজি দিবস 2021:জানুন বিভিন্ন অজানা কথা | World Emoji Day 2021 in Bengali - Benami chithi - বেনামী চিঠি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *