এবছর অলিম্পিকের মেডেল বানানো হয়েছে পুরোনো বাতিল স্মার্টফোন দিয়ে| Tokyo 2020 Medel Project in Bengali

Tokyo 2020 model project in bengali
শেয়ার করুন

অলিম্পিকে নিজের দেশের হয়ে খেলা প্রত্যেক ক্রীড়াবিদের কাছে খুবই গর্বের বিষয়। নিজের পরিশ্রমকে পাথেয় করে তাঁরা যখন জয়লাভ করেন, সেটা শুধু ওই ক্রীড়াবিদকে গর্বিত করে না। গর্বিত হয় একটা পুরো দেশ। অলিম্পিকে জয়লাভ করে প্রতিযোগিরা পায় সোনা, রুপো অথবা ব্রোঞ্জ মেডেল। কিন্তু, আমি যদি বলি এবছর অলিম্পিকে যেসব মেডেল গুলো দেওয়া হল, সেগুলো তৈরি হয়েছে বাতিল পুরনো মোবাইল ফোন সহ নানান ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য থেকে, বিশ্বাস করবেন কি?

হ্যাঁ, শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও, সত্যি। এবছরে অলিম্পিকে যত মেডেল দেওয়া হল, সবই তৈরি হয়েছে, বাতিল পুরনো ফেলে দেওয়া মোবাইল ফোন, ও নষ্ট হয়ে যাওয়া নানা ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি থেকে। আইডিয়াটা জাপানের অলিম্পিকস আয়োজক কমিটির। প্রতিবছরই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উৎপন্ন হয় কোটি কোটি টন, খারাপ হয়ে যাওয়া ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি। এগুলোকে আমরা এক কথায় বলি ইলেকট্রনিক বর্জ্য পদার্থ বা ই-বর্জ্য। এই সমস্ত ইলেকট্রনিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার (Recycle) করতে বিপুল পরিমাণ খরচ হয়। খরচের ভয়ে এগুলোকে পুনর্ব্যবহার করাই হয় না। এই সব ই-বর্জ্য নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারের চিন্তার শেষ নেই।ইউনাইটেড নেশন গ্লোবাল ই ওয়েস্ট সূচক অনুযায়ী 2019-20 সালে সারা বিশ্বের ই-বর্জ্যের পরিমাণ 53.6 মিলিয়ন মেট্রিক টন। যার মধ্যে পুনর্ব্যবহার হয়েছে মাত্র 17.4 %.

এই সমস্ত ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির ভেতরে বিভিন্ন সার্কিট এর মধ্যে সূক্ষ্ম কানেকশনের জন্য, ব্যবহৃত হয় সোনা রুপা, তামার মতো দামি ধাতুর পাত। তড়িৎ পরিবহনের ফলে, প্রত্যেক ধাতুর কিছুটা ক্ষয় হয়। সোনার ক্ষয় সবচেয়ে কম হয় বলে, প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোন তৈরি করতে প্রায় 200 মিলিগ্রাম সোনা ব্যবহার করা হয়।

2020 অলিম্পিকের জন্য জাপান প্রস্তুতি শুরু করেছিল, তিন বছর আগে, 2017 সালে। 2017 সালের এপ্রিল মাসে, অলিম্পিকের আয়োজক কমিটি এক অদ্ভুত আবেদন করেন জাপানবাসীদের কাছে। তাঁরা আবেদন করেন, যার কাছে যত পুরাতন খারাপ বাতিল হয়ে যাওয়া মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি রয়েছে, সেগুলো তাদের কাউন্টারে দান করার জন্য। তারা এই সমস্ত বর্জ্য (E-waste) রিসাইকেল করে পাওয়া ধাতু দিয়ে, 2020 অলিম্পিকের জন্য মেডেল বানাবেন। এই কর্মকান্ডের নাম দেওয়া হয়, ‘টোকিও 2020 মেডেল প্রজেক্ট’ (Tokyo 2020 Medel Project)।

ছবি: ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য সংগ্রহের কাউন্টার

1 লা এপ্রিল 2017 থেকে 31 মার্চ 2019 পর্যন্ত চলা এই কর্মকান্ডের ভার দেওয়া হয় 1,621 টি পৌরসভা সহ জাপানের বিভিন্ন গ্রাম ও ওয়ার্ডকে। ফল মিলল হাতে নাতে। জাপানের 90% এলাকার মানুষ জামা দিলেন বিপুল সংখ্যক বাতিল মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ সহ বিভিন্ন ছোট ইলেকট্রনিক যন্ত্র। স্কুলপড়ুয়া ও ক্ষুদেদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।


সারা জাপান জুড়ে সংগৃহীত হল প্রায় 78,985 টন ই-বর্জ্য। যার মধ্যে শুধুমাত্র মোবাইলের সংখ্যা ছিল প্রায় 62 লাখ। এই বর্জ্য গলিয়ে পাওয়া গেল, প্রায় 32 কেজি সোনা, 3500 কেজি রুপা, 2200 কেজি ব্রোঞ্জ। এই পুনরুদ্ধার করা ধাতু গুলি ফিয়ে তৈরি করা হলো অলিম্পিক ও প্যারাঅলিম্পিকের সমস্ত ইভেন্টের জন্যে প্রায় সব মিলিয়ে ৫,০০০ মেডেল। গোটা পৃথিবী অবাক হয়ে দেখলো ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের এক আশ্চর্য সফল বাস্তবায়ন।

প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, তত নতুন নতুন মোবাইল ও ইলেকট্রনিক গ্যাজেট তৈরি হচ্ছে। পুরোনো গুলো বাতিল হচ্ছে। ফলে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক বর্জ্য। এগুলোর মধ্যে প্লাস্টিকের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আমেরিকা ও চীনের পর ই বর্জ্য তৈরিতে ভারতের স্থান তৃতীয়। 2019-20 সালের হিসেবে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ সারা বছরে গড়ে প্রায় ৮ কেজি ই-বর্জ্য তৈরি করে। এখনই এই সমস্যার রাস টানতে না পারলে, ভবিষ্যতে বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যাবে প্রকৃতির। তাতে বিপদে পড়বে মানুষও।

ইতিহাসে প্রথম বার অলিম্পিকের সমস্ত মেডেল তৈরি হয়েছে পুনর্ব্যবহার করা ধাতু থেকে। আর প্লাস্টিকের অংশগুলো, সমুদ্র থেকে পাওয়া আরো বিভিন্ন প্লাস্টিক বর্জ্যের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে পদক নেবার সময় প্রতিযোগীদের দাঁড়ানোর  স্ট্যান্ড। পরে এগুলো গলিয়ে জলের বোতল তৈরিতে ব্যবহার করা হবে। গত রিও অলিম্পিক (২০১৬) থেকেই পদক তৈরিতে বর্জ্য পুনর্ব্যবহার কিরে পাওয়া ধাতু ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে। রিওতে দেওয়া সমস্ত রুপোর পদক ও প্রায় ৩০% সোনার পদকের জন্যে প্রয়োজনীয় ধাতু এভাবেই জোগাড় করা হয়েছিল। এবারে বর্জ্য থেকে 100% মেডেল তৈরি করে, নজির গড়ল অলিম্পিক আয়োজক সংস্থা।

ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে জাপানের এই অনন্য সাফল্যের ফলে, অলিম্পিকের পরিবেশ বান্ধব ভাবমূর্তি সারা বিশ্বে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। গোটা পৃথিবী পেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নতুন পথের সন্ধান।

ভাবতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি, যে নীরজ চোপড়া, মিরাবাই চানু বা পি ভি সিন্ধুর গলায় অলিম্পিকের যে সোনা, রুপো ও ব্রোঞ্জের মেডেল শোভা পাচ্ছে, কিছু বছর আগে সেটি ছিল জাপানবাসীদের নিত্য ব্যবহারের স্মার্টফোন।

তথ্যসূত্র :
https://olympics.com/tokyo-2020/en/games/medals-project/

আরো পড়ুন:

বিশ্বের প্রথম কৃত্তিম চোখ তৈরি করল অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী

মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, পলিটেকনিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল ও অন্যান্য কোর্সের জন্য স্কলারশিপ

অন্যান্য লেখা গুলো পড়তে ক্লিক করুন

Advertisement
Advertisement

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *