তিরিশ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে পদ্মশ্রী সন্মান পেলেন তুলসী গৌড়া| Tulsi Gowda Padma Awards Winner 2020

Tulsi Gowda
শেয়ার করুন

তাঁর সন্তানের সংখ্যা 30 হাজারেরও বেশি। তাঁর সন্তানরা সবাই উদ্ভিদ। ওনার নেই কোন প্রথাগত শিক্ষা। তবুও ছোটবেলা থেকেই গাছকে অপত্য স্নেহে পালন করতে করতে বুঝে গিয়েছেন, কোন গাছটার কতটা জল দরকার, কোনটার কি সমস্যা, কোন গাছটা চারা তৈরীর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত, কোন গাছের কি কি গুনাগুন, কোন বীজ গুলো কিভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, ইত্যাদি। তাই তাঁকে ‘Encyclopedia of Forests’ (বনের বিশ্বকোষ) বা ‘বনদেবী’ নামেই চেনেন অনেকে। গাছ সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞান হার মানাবে বড় বড় উদ্ভিদ বিজ্ঞানীকে।

তিনি কর্ণাটকের তুলসী গৌড়া (Tulsi Gowda)। গত ছয় দশক ধরে উদ্ভিদ দের নিয়েই তাঁর সংসার। মাত্র 10 বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে গাছেদের লালন পালন করার কাজ শুরু করেছিলেন। আজ তাঁর বয়স 77 বছর। এই ছয় দশকে তিনি বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছেন 30 হাজার মহীরুহ।

গত সোমবার  রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁর এই অসামান্য কৃতিত্বের জন্য, ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার, ‘পদ্মশ্রী’ (Padma shree) দিয়ে ওনাকে সম্মানিত করা হল। তাঁর অনাড়ম্বর স্থানীয় ‘ট্রাডিশনাল’ পোশাকে ছিলনা কোন গ্ল্যামার। এমনকি তাঁর পায়ে ছিলনা জুতো জোড়াও। এমন পোশাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Modi) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত সাহ এর সামনে করজোড়ে নমস্কার করছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করজোড়ে ওনাকে নমস্কার করছেন। এই ছবি যেন টেনে নিল সমস্ত গ্ল্যামার।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইটারে শেয়ার করেছেন এই ছবিটি

আসমুদ্র হিমাচল তাকিয়ে দেখল একজন মাটির মানুষ এবং এক অসামান্য পরিবেশবিদ কে। আধুনিক সমাজ যখন উন্নয়নের দোহাই দিয়ে ধ্বংস করে চলেছে বন জঙ্গল, তিনি আধুনিক সমাজ থেকে বহু দূরে থেকে কাজ করে চলেছেন উদ্ভিদ এবং বন সংরক্ষণ নিয়ে।

1944 সালে কর্ণাটকের একটি অনগ্রসর শ্রেণী, হাক্কালি উপজাতিতে (Halakki Tribal) ওনার জন্ম হয়। খুবই দরিদ্র পরিবারের তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মাত্র 2 বছর বয়সে ওনার বাবা মারা যান। দুবেলা অন্ন জোটাতে হিমশিম অবস্থা। ওনার মা কাজ নিলেন স্থানীয় এক নার্সারি তে। স্কুলে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। অভাবের তাড়নায় ছোটবেলা থেকেই সেই নার্সারিতে মায়ের সঙ্গে দিনমজুর হিসাবে কাজ শুরু করতে হয়। পরবর্তী কালে বনবিভাগের নার্সারিতে কাজ নেন। সেখানেইও কয়েক বছর দিনমজুরের কাজ করেন।

পরবর্তী কালে তাঁর উদ্ভিদ সম্বন্ধে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে, ওনার পদটি স্থায়ী করে দেওয়া হয়। সেখানে তিনি চারা তৈরির জন্য মাতৃ উদ্ভিদ (Mother Plant) নির্বাচন, চারা তৈরি, বীজ সংরক্ষণ, বৃক্ষ রোপন, শুষ্ক মরসুমে গাছে জল দেওয়া, উদ্ভিদ দের রক্ষণাবেক্ষণ সহ অন্যান্য কাজ করতেন। 70 বছর বয়সে বন বিভাগ থেকে তিনি অবসর নেন। তবুও তিনি থেমে থাকেন নি। তার সন্তানদের আজও তিনি যত্ন করে চলেছেন।

শুধুমাত্র বন সংরক্ষণ নয়, তিনি কাজ করে চলেছেন নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও। তাঁর এলাকায় একবার এক মহিলাকে বন্দুক দেখিয়ে নির্যাতন করা হলে, তিনি প্রাণের মায়া না করে রুখে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি অপরাধীর শাস্তির দাবিতে থানাতেও গিয়েছিলেন। এবারের পদ্মশ্রী পুরস্কারের তালিকায় 119 জন পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় তাঁর নামটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কবিন্দ এর হাত থেকে গ্রহণ করলেন পদ্মশ্রী পুরস্কার গ্রহণ করছেনতুলসী গৌড়া (Tulsi Gowda)

‘দাও ফিরে সে অরণ্য’ এই মহামন্ত্রে দীক্ষিত তুলসী গৌড়া (Tulsi Gowda) রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কবিন্দ এর হাত থেকে গ্রহণ করলেন পদ্মশ্রী পুরস্কার (Padma Awards)। সবাই তাকিয়ে দেখল প্রাচীন এক প্রকৃতি প্রেমীকে। এই মহান বনদেবী কে প্রণাম। আমরা যে অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে আছি, তার জন্যে খানিকটা হলেও, ওনার কাছে আমরা ঋণী।

আরো পড়ুন:

পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান রয়েছে ভারতে

Advertisement
Advertisement

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *