পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থেকে প্রণতি নায়েক (Pranati Nayek) যাচ্ছে জাপান অলিম্পিকে

প্রণতি নায়েক
শেয়ার করুন

মেদিনীপুর থেকে টোকিও–এ যেন এক অবিশ্বাস্য কল্পকথা। পশ্চিম মেদিনীপুরের, পিংলার প্রণতি নায়েক যাচ্ছে, জাপান অলিম্পিকে। জাপানের টোকিও শহরে 24 শে জুলাই থেকে শুরু হবে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আসর। সেখানে জিমনাস্টিক বিভাগে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার, প্রণতি নায়েক (Pranati Nayek)। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে জিমনাস্টিক শেখা। তারপর একে একে তার ঝুলিতে জমা হয় জেলা রাজ্য ও কেন্দ্র স্তরের অনেক পুরস্কার। 2019 সালের এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমনাস্টিক চ্যাম্পিয়নশীপের, ভল্ট বিভাগে ব্রোঞ্জ জয়ের পর, খুলে যায় তার অলিম্পিকের দরজা।


ভারতের প্রথম মহিলা জিমন্যাস্ট, বাঙালি দীপা কর্মকার এর পর, দ্বিতীয় মহিলা জিমন্যাস্ট আর এক বাঙালি, বছর 26 এর প্রণতি নায়েক। অলিম্পিক শুরু হতে, হাতে আর মাত্র কটা দিন। এখন কলকাতায় সল্টলেকের SAI (স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) স্টেডিয়ামে জোর কদমে চলছে তার প্র্যাকটিস।

ভল্ট দিচ্ছে প্রণতি নায়েক (Pranati Nayek)

প্রণতির কথায়, ‘সকলেরই স্বপ্ন থাকে অলিম্পিক্সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। আমি তখন বেশ ছোট। অলিম্পিক্স কী বুঝতাম না। আমার কোচ মিনারা বেগম বলেছিলেন যে, কেউ যদি জিজ্ঞেস করে তোর স্বপ্ন কী, বলবি অলিম্পিক্সে খেলা। সেরকম বলতে বলতে না জানি কখন সত্যিই সেই স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরেছি। পরে সিনিয়র পর্যায়ে খেলার সময় বুঝতে পারলাম কতটা কঠিন অলিম্পিক্সের যোগ্যতা পাওয়া।’

ছোটবেলায় পিংলার স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে শুভাশিষ চক্রবর্তীর কাছে জিমন্যাস্টিক্সে হাতেখড়ি। প্রণতির কথায়, ‘তখন জানতামও না ওটা জিমন্যাস্টিক্স। ভাবতাম যোগাসন করছি।’


জেলাস্তরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রাজ্য পর্যায়ে খেলতে কলকাতায় আসেন। দারিদ্র ছিল নিত্য সঙ্গী। বাবা বাস ড্রাইভার। যেখানে দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাড় করতে, হিমশিম অবস্থা, কোন স্পোর্টস একাডেমীতে ভর্তি হয়ে জিমনাস্টিক শেখা ছিলো স্বপ্নের অতীত। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক SAI ( স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সাইয়ের কোচেরা বলেছিলেন, কলকাতায় নিয়ে এসে ট্রায়ালের অংশগ্রহণ করার কথা। মাত্র আট বছর বয়সে কলকাতায় SAI তে জিমন্যাস্টিকের ট্রায়ালের পরও, সুযোগ মেলেনি। কোচেরা বলেছিলেন, জিমন্যাস্টিক্সে ভর্তি হবে না। এই মুহূর্তে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না কাউকে। তার বাবা কাঁদতে কাঁদতে হাত ধরে নিয়ে চলে আসছিলেন। তারপরই জিমের এক কাকু, দিলীপ বিশ্বাস তাদের SAI-এর ডাইরেক্টর সুস্মিতা ম্যাডামের কাছে নিয়ে যান। সুস্মিতা ম্যাডাম, তাকে কোচ মিনারা বেগমের কাছে ভর্তি হতে সাহায্য করেন। এক রত্তি মেয়ের পারফরম্যান্স দেখে, কোচ মিনারা বেগম বুঝেছিলেন একে দিয়ে কিছু হতে পারে।

প্রণতি নায়েক | Pranati Nayek

তবে লড়াইয়ের সেখানেই শেষ নয়। কলকাতায় কোনও হস্টেল পায়নি প্রণতি। বাড়ি ভাড়া করে থাকতে হতো। কলকাতায় একটানা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা, খাওয়ার খরচ চালানো পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাকে কিছু অর্থ সাহায্য করেন । একরত্তি মেয়ের সঙ্গে এক সপ্তাহ বাবা আর পরের সপ্তাহ মা এসে থাকতেন কলকাতায়।

আরো পড়ুন: আয়রন ডোম কি ?

স্টেডিয়াম লাগোয়া এক পরিচিতের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ওই বাড়িতে প্রণতিকে তিন মাস রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তাঁর বাবা-মা। তবে- প্র্যাক্টিসের পাশাপাশি প্রণতিকে ঘর মোছা-সহ বাড়ির কাজ করতে হতো। তাঁর মা প্রতিমা নায়েক কলকাতায় এসে যা জানতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখনই মিনারা বেগম এগিয়ে এসে প্রণতিকে তাঁর বাড়িতে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। পরের এক বছর প্রণতির ঠিকানা হয় মিনারার বাড়িতেই। তারপর জাতীয় মিটে সোনা। হস্টেল পায় প্রণতি। পায় কিছু সরকারি সাহায্যও । লড়াইয়ের পথ কিছুটা সুগম হয়।

প্রণতি নায়েক (বাম দিক থেকে প্রথম)


প্রথম দিন থেকে আজ 26 বছর পর্যন্ত মিনারা বেগম তার কোচ। মিনারা বেগম এর তত্ত্বাবধানেই 2019 সালের এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমনাস্টিক চ্যাম্পিয়নশীপে তার ব্রোঞ্জ জয়। এরপর এই সুযোগ আসে টোকিও অলিম্পিকে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার।

অনেক অভাব অনটন সত্ত্বেও, তার বাবা মেয়ের স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা দেননি । আজ মেয়ে অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করতে যাবে, জেনে খুশিতে ভরে উঠেছে তার মা বাবার চোখ। তার মায়ের কথায়, মেয়ে ছোটবেলা থেকে ছিল ডানপিটে। দু বছর বয়স থেকে লাফ-ঝাপ,খেলার দিকে তার মন।

অলিম্পিকে নাম লিখিয়ে প্রাথমিক জয়টা তো পেয়েই গেছে প্রণতি। ভারতের 139 কোটি জনসংখ্যার মধ্যে, মাত্র 126 জন জিমন্যাস্ট আছেন। সেই 126 জনের মধ্যে অলিম্পিকে জায়গা পেয়েছে একমাত্র প্রণতি নায়েক। অতিমারীর মধ্যেই সে উড়ে যাবে জাপান।বঙ্গবাসীরা তো বটেই, সারা দেশ আজ তার দিকে তাকিয়ে। তার জয়ের আশায় বুক বেঁধেছে 139 কোটি ভারতবাসী।

প্রণতি নায়েক (Pranati Nayek)

এক নজরে প্রণতি নায়েক (Pranati Nayek):

[wpdatatable id=2]

আরো বিভিন্ন বিষয়ে লেখা পড়তে ক্লিক করুন

Advertisement
Advertisement

2 thoughts on “পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থেকে প্রণতি নায়েক (Pranati Nayek) যাচ্ছে জাপান অলিম্পিকে”

  1. Pingback: কয়েক ঘণ্টায় 50 লক্ষ ডাউনলোড হল, পাবজি (PUBG) গেম বা ব্যাটলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া গেম (BATTLEGROUNDS MOBILE INDIA GAM

  2. Pingback: পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান ন্যাশনাল পার্ক 'কেইবুল লামজো ন্যাশনাল পার্ক' (Keibul Lamjao National Park) - Benami chithi - বেনাম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *